ইমদাদ চৌধুরীর অভিযোগের তির কয়েস লোদীর দিকে!

কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :

সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরীর মুঠোফোনে সিলেট সিটি করপোরেশনের আওয়ামী লীগদলীয় সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর কল এসেছে কি না- এ বিষয়কে ছাপিয়ে এবার সামনে চলে এসেছে ‘সভাপতি-সেক্রটারি দ্বন্দ্ব’।

ঘটনার পর প্রেস ব্রিফিং করে ‘কলকাণ্ড’র বিষয়ে অভিযোগের মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদীর দিকেই ছুঁড়েন ইমদাদ হোসেন চৌধুরী। পরবর্তীতে প্রথম আলো পত্রিকায় দেওয়া এক বক্তব্যেও সরাসরি কয়েস লোদীর নাম নিয়ে এ ঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগ করেন। 

তা অভিযোগটি সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেননি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী।

গত মঙ্গলবার (২০ মে) রাতে চাউর হয়- ওই দিন সন্ধ্যায় সিলেট মহানগরের বারুতখানাস্থ ফুড প্যারাডাইস রেস্টুরেন্টে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের মতবিনিময় চলাকালে মাগরিবের নামাজের বিরতি হয়। এসময় ইমদাদ হোসেন চৌধুরী তাঁর ব্যক্তিগত মুঠোফোনটি টেবিলে রেখে নামাজে চলে যান। নামাজে থাকাকালে তাঁর মোবাইলে রিং বেজে উঠে এবং ডিসপ্লেতে ভেসে উঠে ‘আনোয়ারুজ্জামান ইউকে’।  

এসময় মিটিংয়ে থাকা কয়েকজন দৃশ্যটি মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ধারণ করে ফেলেন। পরবর্তীতে তা ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে- শুরু হয় নানা আলোচনা-সমালোচনা। 

আলোচনা-সমালোচনার মুখে ওই রাতেই ১১ টার দিকে প্রেস ব্রিফিং করেন  ইমদাদ হোসেন চৌধুরী। এসময় তিনি বলেন- মঙ্গলবার বিকাল ৫টা ৪০ মিনিট থেকে বারুতখানার একটি রেস্টুরেন্টে বিএনপির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ব্যবসায়ী সমিতির একটি মতবিনিময় সভা ছিলো চেম্বার অব কমার্স নিয়ে। এ সভা চলাকালীন আমার মোবাইল ফোনটি ছিলো আমার সব সময় সঙ্গে থাকা আখতারের কাছে, ছবি তোলার জন্য। মতবিনিময়ের পর আমরা মাগরিবের নামাজ পড়ে গাড়িযোগে আম্বরখানা যাওয়ার সময় আরিফ নামে একজন আমাকে কল দিয়ে বলেন- আমার ফোনে নাকি আনোয়ারুজ্জামানের কল এসেছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে মোবাইলের কল লিস্ট খতিয়ে দেখি- ৬টা ৫১ মিনিটে একটি কল দেখাচ্ছে। এতে আমি অবাক হই এবং বিষয়টি আখতারকে জিজ্ঞেস করি। তখন আখতার আমাকে বলে- তার কাছে আমার ফোন থাকাকালে সিলেট বিমানবন্দর থানা শাখার সদস্যসচিব সরোয়ার ও মহানগর বিএনপির সভাপতির পিএস ইমন তাকে ডেকে একটি স্থানে বসিয়েছে এবং এসময় আমার ফোনের ডিসপ্লে’র ছবি তুলেছে, এর বেশি আখতার আর কিছু জানে না।

ইমদাদ হোসেন চৌধুরী আরও বলেন- ৫ আগস্টের আগে ডেভিল আনোয়ারুজ্জামান দ্বারা আমি ও আমার দলের অসংখ্য নেতাকর্মী অনেকভাবে নির্যাতিত হয়েছি। এসবের পরও আমি কীভাবে আমি আনোয়ারুজ্জামানের সঙ্গে ফোনে কথা বলবো? প্রশ্নই আসে না এমনটি করার। যারা আমার ইমেজকে নষ্ট করার জন্য এমন ষড়যন্ত্র করেছে তাদের বিরুদ্ধে আমি আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এ ঘটনা ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়।  

এক প্রশ্নের জবাবে সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বলেন- আমি ঠিক জানি না কী ঘটেছে। আমি লন্ডন থাকা অবস্থায় আনোয়ারুজ্জামানের নাম্বার স্টোর হতেও পারে। তবে আমার কথা হয়নি কোনোদিন। আজকের (মঙ্গলবার) ঘটনা কী সেটিও বলতে পারছি না। আনোয়ারুজ্জামান কল করেছেন নাকি ষড়যন্ত্রকারীরা কোনো ডিভাইস দিয়ে এমনটি করেছে- বুঝতে পারছি না।

এদিকে, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ইমদাদ হোসেন চৌধুরী প্রথম আলো পত্রিকাকে বলেন- ‘যিনি আমার জনপ্রিয়তায় অ্যাফেকটেড, তিনিই এ ষড়যন্ত্র করেছেন। তিনিই পিএস দিয়ে এমন ষড়যন্ত্র করেছেন। কারণ, তখন আমার হাতে ফোনটি ছিল না। কোনো প্রযুক্তি দিয়েই হোক কিংবা কাউকে দিয়ে আনোয়ারুজ্জামানের ফোন থেকে হোক, ঠিক জানি না, কীভাবে এ কল করিয়েছে। মোটকথা আনোয়ারুজ্জামান আমাকে কল করার কথা নয়।’

এ ঘটনার নেপথ্যে মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী সম্পৃক্ত আছেন বলে ইমদাদ হোসেন প্রথম আলোকে তিনি ইঙ্গিত দেন।

তবে ইমদাদের অভিযোগ প্রসঙ্গে রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেন, ‘আমার কোনো পিএসই নেই। এ ছাড়া এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’

এদিকে প্রথম পত্রিকার প্রতিবেদনে প্রকাশ- তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক নেতা বলেছেন, গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান লন্ডনে চলে যান। তিনি কেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদককে কল করবেন? নিশ্চয়ই তাঁর (ইমদাদ) সঙ্গে আনোয়ারুজ্জামানের সখ্য, আঁতাত কিংবা যোগাযোগ আছে। এ বিষয়টির সঠিক তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। নতুবা দলের তৃণমূলে ভুল বার্তা যাবে।

বিষয়টি নিয়ে সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাতে ইমদাদ হোসেন চৌধুরী কওমি কণ্ঠকে বলেন- ‘বিষয়টি কেন্দ্র দেখছে, তাই আমি কোনো আইনি পদক্ষেপ নেইনি। তা না হলে আমি আইনের আশ্রয় নিতাম।’