মধ্যরাতে কী ঘটেছে সিলেটের মেজরটিলায়?

কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :

সিলেট মহানগরের মেজরটিলা এলাকায় সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) দিবাগত মধ্যরাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয়ে ৪ জনকে আটকের খবরে উত্তপ্ত হয় উঠে সে এলাকা। পরে জনতার তোপের মুখে একটি বাহিনী তাদের গাড়ি থেকে ৪ জনকে নামিয়ে দেয়। এ নিয়ে সিলেটে তোলপাড় চলছে।

তবে ওই বাহিনীর দাবি- ‘অবৈধ অস্ত্র আছে’ এমন তথ্যের ভিত্তিতে তারা অভিযান চালিয়ে কয়েকজনকে আটক করেছিলো। পরে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়া তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। 

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ১টার দিকে মেজরটিলা বাজারের ফুলকলি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে থেকে দুজনকে আটক করে সাদা পোশাকধারী কয়েকজন। এসময় তারা নিজেদের গোয়েন্দা পুলিশ বলে পরিচয় দেয়। এর কিছুক্ষণ পর পার্শ্ববর্তী সৈয়দপুর আলুরতল এলাকা থেকে আরও দুজনকে র‍‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍‍্যাব)-৯ পরিচয়ে আটক করা হয়।

আটকরা ছিলেন- সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নুরুল হক মাসুম, জেলা যুবদলের সদস্য হারুনুর রশিদ এবং স্থানীয় ব্যবসায়ী খোকন মিয়া ও জাকির হোসেন। 

এ ৪ জনকে আটকের খবর ছড়িয়ে পড়লে রাত ২টার দিকে মেজরটিলায় সিলেট-তামাবিল সড়ক অবরোধ করেন স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা। এসময় সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন তারা। পরে রাত ৩টার দিকে জনতার তোপের মুখে র‍‍্যাব-৯ এর একটি পিকআপ থেকে আটক ৪ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান- ঘটনাস্থলে র‍‍্যাবের দুটি পিকআপ ছিলো ও দুটি মাইক্রোবাসেও র‍‍্যাব সদস্যরা ছিলেন।

তবে এ বিষয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের কোনো বক্তব্য দেয়নি র‍‍্যাব। মঙ্গলবার সকালে র‍‍্যাব-৯ এর মিডিয়া অফিসারের সরকারি ফোন নাম্বারে একাধিকবার কল দিলে তিনি রিসিভি করেননি।

পরে দুপুরে তিনি কওমি কণ্ঠকে বলেন- র‍‍্যাবের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চালিয়েছিলো। এসময় কয়েকজনকে আটক করা হয়। পরে অস্ত্র না পাওয়ায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

ভার্চুয়াল মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন- র‍‍্যাব-৯ অতীতেও কোনো বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলো না, এখনো নেই।

স্থানীয় সূত্র জানায়, মেজরটিলা এলাকার জাহানপুরে একটি জমি দখলকে কেন্দ্র করে সোমবার দিনভর বিএনপির দুটি পক্ষে উত্তেজনা বিরাজ করছিলো। একটি পক্ষ ওই জায়গা সোমবার দুপুরে দখল করে। পরে অপরপক্ষ দখল করতে গেলে স্থানীয় জনতা ওই জায়গায় বিরোধে জড়াতে নিষেধ করেন। এরই জের ধরে বিএনপির একটি পক্ষ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রভাবিত করে মধ্যরাতে ৪ জনকে আটক করায়। তবে স্থানীয় জনতার তোপের মুখে পড়ে আটক ৪ জনকে রাতেই ছেড়ে দেওয়া হয়।

মহানগর যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আব্দুল মান্নান ঘটনার সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন- আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যে আক্রমণাত্মক ভূমিকা রেখেছে, এতে সন্দেহ হচ্ছে- আমরা এখনো ফ্যাসিবাদী সময়ে বাস করছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আজকের এই ভূমিকা খুবই হতাশা ও উদ্বেগজনক।

সিলেটের শাহপরাণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনির হোসেন কওমি কণ্ঠকে বলেন- আমি একটি মিটিংয়ে। এ বিষয়ে পরে বলতে পারবো। 

সিলেট মেট্রোপলিট পুলিশের (এসএমপি) মিডিয়া অফিসার অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম কওমি কণ্ঠকে বলেন- একটি জায়গা দখল নিয়ে এলাকায় দুপক্ষের উত্তেজনা চলছিলো। পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী একটি বাহিনী ৪ জনকে আটক করলে এ নিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়। এ বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের টিম ঘটনাস্থলে রয়েছে।