প্রশাসনের বৈঠকে আ. লীগ নেতারা! তোলপাড়

কওমি কণ্ঠ ডেস্ক :

ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর ও পদধারী আওয়ামী লীগের স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের নিয়ে সম্মেলন করলো বরিশাল জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে নয়টায় বরিশালের বিলাসবহুল গ্র্যান্ডপার্ক হোটেলে এর আয়োজন করা হয়।

‘গ্রাম আদালত সক্রিয়করণে স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা’ শীর্ষক এ সম্মেলনে বরিশালের দশটি উপজেলার ২০ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা অংশ নেন। এদের মধ্যে ১৮ জনই স্থানীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা। বাকি দুজন বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলনের।

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হত্যা, নির্যাতন, হামলা-মামলা ও লুটপাটসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে এসব নেতার বিরুদ্ধে।

৫ আগস্টের পর এসব চেয়ারম্যানরা আত্মগোপনে ছিলেন। তবে বৃহস্পতিবার প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের আয়োজনে সম্মেলনে যোগ দিয়ে এখন তারা ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন। অনেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা এ সম্মেলনের সেলফি ও ফটোসেশনের ফুটেজ ফেসবুকে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ লিখে পোস্ট করেছেন। ফ্যাসিস্টরা যাতে ফিরে আসতে না পারে সে লক্ষ্যে যৌথ বাহিনীর চলমান অভিযানের মধ্যে এ ধরনের বৈঠকের খবরে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বরিশালের বিএনপি, জামায়াত ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।

তাদের মতে, বিভাগীয় প্রশাসনের এ ধরনের আয়োজন ফ্যাসিস্টদের ফিরে আসার সুযোগ করে দেবে। এটি আমাদের বিপ্লবী চেতনার সঙ্গে যায় না।

সূত্র জানায়, হোটেল গ্র্যান্ড পার্কের সম্মেলন কক্ষে গ্রাম আদালত টেকসইকরণে স্থানীয় প্রশাসনের গুরুত্ব ও করণীয় শীর্ষক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে মেহেন্দিগঞ্জ সদর ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন আহমেদ, গৌরনদীর মাহিলারা ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈকত গুহ পিকলু, মুলাদীর কাজিরচর ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের একান্ত সচিব হারুনুর রশিদ বিশ্বাসের বড় ভাই মন্টু বিশ্বাস, উজিরপুরের সাতলা ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহিন হাওলাদার, বাবুগঞ্জের দেহেরগতি ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মশিউর রহমান, উজিরপুরের শিকারপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি নজরুল ইসলাম, হিজলার মেমানিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাসের উদ্দিন, বরিশাল সদর উপজেলার চন্দ্রমোহন ইউপির চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল হক, টুঙ্গীবাড়ীয়া ইউপির চেয়ারম্যান ও আ.লীগ নেত্রী নাদিরা রহমান, বাকেরগঞ্জের দুধল ইউপির চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মোর্শেদ খান ও নিয়ামতি ইউপির চেয়ারম্যান ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বরিশাল জেলা শাখার সদস্য হুমায়ুন কবীর উপস্থিত ছিলেন।

আরো উপস্থিত ছিলেন মেহেন্দিগঞ্জের আলিমাবাদ ইউপির চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য ইমরান হোসেন, গৌরনদীর সরিকল ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়মী লীগের সদস্য ফারুক হোসেন মোল্লা, ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুল ইসলাম, উদয়কাঠি ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা হুমাউন কবির, রহমতপুর ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, ৬ নম্বর ওয়ার্ড লামচর ক্ষুদ্রকাঠির ইউপি সদস্য বিএনপি সমর্থক সুমন শিকদার, হিজলার ধুলখোলা ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা জামাল উদ্দিন ঢালী, আগৈলঝাড়ার রাজিহার ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস তালুকদার, গৈলা ইউপির চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. শফিকুল হোসেন।

সম্মেলনে উপস্থিত ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে গ্রাম আদালত টেকসইকরণে মতামত নেওয়া হয়।

সম্মেলনে আওয়ামী লীগ নেতারা তাদের মতামত তুলে ধরেন। বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. রায়হান কায়সারের সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ কে এম তারিকুল আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি মো. মঞ্জুর মোর্শেদ আলম, বরিশাল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, স্থানীয় সরকারের বরিশাল বিভাগের পরিচালক খন্দকার আনোয়ার হোসেন এবং সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।

অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বরিশাল জেলা শাখার সদস্য ও বাকেরগঞ্জের দুধল ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ গোলাম মোর্শেদ বলেন, কাদের নিয়ে সম্মেলন আয়োজন করা হবে সেটি জানতাম না। যেসব জনপ্রতিনিধি অনুষ্ঠানে এসেছেন আমি তাদের ব্যক্তিগতভাবে চিনি না।

এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিএনপি, জামায়াত ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।

এ বিষয়ে বিএনপি নেতা সাবেক এমপি মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন- বিএনপি, জামায়াতসহ সব দলের নেতারা চান জাতীয় নির্বাচনের পর স্থানীয় সরকার নির্বাচন। স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণের বিষয় নিয়ে এখন আলোচনা হতে পারে না। বিভাগীয় প্রশাসনের এ ধরনের আয়োজন কোনোভাবেই কাম্য নয়।

বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পদধারী নেতাদের নিয়ে এ ধরনের বৈঠক কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ বৈঠক রহস্যজনক।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেলারেল ও বরিশাল মহানগর জামায়াতের সাবেক আমির অ্যাডভোকেট মুয়াযযম হোসাইন হেলাল বলেন, এখন অপারেশন ডেভিল হান্ট চলমান। ফ্যাসিস্টরা যাতে ফিরে আসতে না পারে, সরকারের পক্ষ থেকে সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু এ বৈঠক করা মানে ফ্যাসিস্টদের ফিরে আসার সুযোগ দেওয়া। এটা আমাদের বিপ্লবী চেতনার সঙ্গে যায় না।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বরিশাল মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. সাহাদাত বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগ ইউনিয়ন পরিষদ এখনো কেন বিলুপ্ত করেনি তা বোধগম্য নয়। সারা দেশে যারা চেয়ারম্যান-মেম্বার রয়েছেন, তারা বিনা ভোটে নির্বাচিত। ফ্যাসিস্টদের দোসর এসব জনপ্রতিনিধিকে রহাল রাখার প্রশ্নই ওঠে না। এ ধরনের আয়োজন দুরভিসন্ধিমূলক।

এ বিষয়ে বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. রায়হান কায়সার বলেন, এটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রোগ্রাম। কাদের দাওয়াত দেয়া হয়েছে বিষয়টি তারাই ভালো বলতে পারবেন।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পরিচালক খোন্দকার আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকারের পক্ষ থেকে এই সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছিল। জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণের কথা ছিল। আমরা ইউপি চেয়ারম্যানদের সিলেক্ট করিনি। কারা সম্মেলনে যোগ দেবেন তা জেলা প্রশাসক সিলেক্ট করেছেন। এ বিষয়ে আমার কিছুই বলার নেই।

এ বিষয়ে বরিশালের জেলা প্রশাসক বলেন, আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ২০ জনের নাম চেয়েছি। তারা যে নাম দিয়েছেন তাদের সিলেক্ট করা হয়েছে। কে কোন দল করেন তা আমাদের জানার কথা নয়।


মূল রিপোর্ট : আমার দেশ