কওমি কণ্ঠ ডেস্ক :
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে হঠাৎ করে ‘বিএনপি নিয়ে’ সরব হয়ে উঠেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগ-অনুযোগ আর ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে তাদের।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) বিকেলে শুরুটা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এবং অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
তিনি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ‘সরকার নিরপেক্ষ থাকতে না পারলে নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন হবে’ শীর্ষক বক্তব্যকে আরেকটা ১/১১ এর ইঙ্গিত বলে মন্তব্য করেন। এরপর থেকে তার পোস্টের বক্তব্য সমর্থন করে অন্য সমন্বয়করাও ফেসবুকে পোস্ট দিতে থাকেন। ‘৫ আগস্টের পর বিএনপির জন্য জাতীয় সরকার গঠন করা যায়নি’ উল্লেখ করে ক্ষোভ প্রকাশ করতেও দেখা গেছে।
ফেসবুক পোস্টে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ও নাগরিক সমাজের সমন্বয়ে একটা জাতীয় সরকার। জাতীয় সরকার হলে ছাত্রদের হয়তো সরকারে আসার প্রয়োজন হতো না। জাতীয় সরকার অনেকদিন স্থায়ী হবে, এই বিবেচনায় বিএনপি জাতীয় সরকারে রাজি হয় নাই।’
অ্যাটর্নি জেনারেল বিএনপির লোক বলে উল্লেখ করেন নাহিদ ইসলাম। বলেন, ‘সরকার গঠনের আগেই ৬ আগস্ট অ্যাটর্নি জেনারেল এবং পুলিশের আগের আইজির নিয়োগ হয়েছিল, যারা মূলত বিএনপির লোক। এরকমভাবে সরকারের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত নানা স্তরে বিএনপিপন্থী লোকজন রয়েছে। নির্বাচনের নিরপেক্ষতার কথা বললে এই বাস্তবতায়ও মাথায় রাখতে হবে।’
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘বিএনপি মহাসচিবের নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মূলত আরেকটা ১/১১ সরকার গঠনের ইঙ্গিত বহন করে। ১/১১-এর বন্দোবস্ত থেকেই আওয়ামী ফ্যাসিজমের উত্থান ঘটেছিল। বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যে সামনে আরেকটা ১/১১ সরকার, সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও নতজানু পররাষ্ট্রনীতির ধারাবাহিকতা এবং গুম-খুন ও জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ার আলামত রয়েছে।’ ছাত্র এবং অভ্যুত্থানের নেতৃত্বকে মাইনাস করার পরিকল্পনা ৫ আগস্ট থেকেই শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ করেন এই উপদেষ্টা।
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে স্ট্যাটাস দিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াও। তিনি লেখেন, ‘বিভিন্ন সরকারি/সাংবিধানিক গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগে তদবির/চাপ প্রয়োগ করা অনুচিত।’
তার কথায়, ‘সরকারে থেকে রাজনৈতিক দলের সাথে কোনো প্রকার সংশ্লিষ্টতার বিরুদ্ধে আমরাও। উপদেষ্টাদের কেউ রাজনীতি করলে সরকার থেকে বের হয়েই করবে। একই সাথে রাজনৈতিক দলেরও সরকারের কাজে হস্তক্ষেপ করা অনুচিত।’
ছাত্র-জনতার নতুন রাজনৈতিক দল বিএনপি নিজেদের স্বার্থের বিপক্ষে হুমকি হিসেবে দেখছে বলে মনে করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। পোস্টে তিনি লেখেন, ‘বিএনপি বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনরায় আওয়ামী লীগের অবাধ অনুপ্রবেশ করতে দিলেও ছাত্র-জনতার সম্মিলনে নতুন একটি রাজনৈতিক দলের উত্থান দেখতে চায় না।’
তিনি আরও লেখেন, ‘দেশ ও জনগণের আকাঙ্ক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে গণঅভ্যুত্থানের পরে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের প্রয়োজনীয়তা উপস্থিত হলো জনসমক্ষে। ঠিক এ কারণেই ফ্যাসিবাদবিরোধী ও জুলাই স্পিরিট ধারণকারী ছাত্র-জনতার সম্মিলনে যখন নতুন একটি রাজনৈতিক দলের উত্থান হওয়ার আভাস পেল, ঠিক তখন বিএনপি সেটিকে চিহ্নিত করল, তাদের দলীয় স্বার্থের বিপক্ষে হুমকি হিসেবে।’
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের পরে বাংলাদেশের কাঠামোগত পরিবর্তন করার সময় ও সুযোগ এলো, অথচ বিএনপি দেশ পুনর্গঠনের এই সুযোগকে অবমূল্যায়ন করে হাজির হলো ১/১১ সরকারের ফর্মূলার আলাপ নিয়ে।’
পোস্টে তিনি অভিযোগ করেন, ‘বিএনপি বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনরায় আওয়ামী লীগের অবাধ অনুপ্রবেশ করতে দিলেও ছাত্র-জনতার সম্মিলনে নতুন একটি রাজনৈতিক দলের উত্থান দেখতে চায় না।’
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে জাতীয় নাগরিক কমিটির মূখ্য সংগঠক সারজিস আলম লিখেছেন, ‘ছাত্র-জনতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে জাতীয় সরকার গঠনে বাধা দিয়েছে।’
তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের দেওয়া একটি পোস্ট ফেসবুকে শেয়ার করে তিনি লেখেন, ‘এখন আবার সকাল-বিকাল নিয়ম করে দ্রুততম সময়ে নির্বাচন চাচ্ছে। এরা যে নব্য ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠবে না এর গ্যারান্টি কী?’
সমন্বয়ক মাহিন সরকার তার ফেসবুক আইডিতে তথ্য উপদেষ্টাকে ম্যানশন করে লিখেছেন, ‘নাহিদ ইসলাম ভাই বিএনপির গণঅভ্যুত্থানের ফসল নস্যাৎ করার ঐতিহাসিক দায় নিয়ে বলবেন বলবেন করে বলেই ফেললেন। ঐতিহাসিক দায় ক্যান্টমেন্টে রেখে যখন টকশোতে ১/১১'র গল্প ঝাড়েন, তখন মজাই লাগে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ নাহিদ ইসলামের পোস্ট শেয়ার করে লিখেছেন, ‘অনেক কথা বলতে চেয়েও পারিনি, আমার ভাই আজ বলেছেন....। আর আমাদের চুপ রাখতে পারবেন না। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান বেচার ধান্দা সফল হতে দেয়া হবে না......।’
বিএনপি নিয়ে ফেসবুকে ‘বিস্ফোরক’ পোস্ট কেন :
গত মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিবিসি বাংলাকে একটি সাক্ষাৎকার দেন। সেখানে তিনি সরকার নিয়ে ‘সংশয়’ প্রকাশ করেন। অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে না পারলে নির্বাচন করতে পারবেন না বলেও জানান তিনি।
জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীরা নতুন রাজনৈতিক গঠন করে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে চান বলে শোনা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকারে নিজেদের প্রতিনিধি রেখে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে অন্য রাজনৈতিক দলগুলো বিষয়টি মেনে নেবে না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা জিনিসটা লক্ষ্য করছি, ছাত্ররা তারা একটা রাজনৈতিক দল তৈরি করার কথা চিন্তা করছেন। সেখানে যদি ছাত্রদের প্রতিনিধি এই সরকারে থাকে, তাহলে তো নিরপেক্ষ থাকতে পারবে না। ওইটা হচ্ছে, সম্ভাব্য কথা। কিন্তু যদি তারা মনে করে যে, (সরকারে) থেকেই তারা নির্বাচন করবেন, তাহলে তো রাজনৈতিক দলগুলো মেনে নেবে না।’
সরকার নিরপেক্ষ থাকতে না পারলে নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন হবে বলে জানান মির্জা ফখরুল। এরপর বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ ফেসবুকে সরব হয়ে বিএনপি বিস্ফোরক মন্তব্য করতে দেখা যায়। এ সময় তারা ক্ষোভ ও হতাশাও প্রকাশ করেন। জাতীয় ঐক্য নিয়ে সংশয়ও প্রকাশ করেছেন কোনো কোনো সমন্বয়ক-ছাত্রনেতা।
মূল রিপোর্ট : বাংলাদেশের খবর